এবারের বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহন করছি, এবারই প্রথম। যারা আগে পরীক্ষা দিয়েছেন তাদের কাছে পরামর্শ চাচ্ছি। অাগাম ধন্যবাদ
ধন্যবাদ, পরীক্ষার হলে গিয়ে কিভাবে কোনটার উত্তর আগে দিবো, কিভাবে সময় ভাগ করে নিবো এ বিষয়ে কি কোন টিপস দিতে পারেন?
আপনি বিসিএস মডেল টেস্টগুলো দিলে একটা ভালো ধারণা পাবেন । নিচে লিঙ্ক দিয়েদিলাম-
https://jobtestbd.com/model-test-cat/bcs-model-test-online/
পরীক্ষার হলে গিয়ে আপনি আগে সহজ গুলো পুরন করেবেন। কখনও আগে ম্যাথ করবেনা কারন প্রথমে করলে এতে সময়ের অপচয় হবে। সহজ গুলো করার পর ম্যাথ করবেন। তবে অবশ্যই সন্দেহ আছে এমন প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়াই ভাল।
পড়াশুনা যা করেছেন তাই যথেষ্ট। নতুন করে আর কিছু পড়ার দরকার নেই। এই ২ দিন কে কাজে লাগান এত দিনের অর্জিত বিক্ষিপ্ত জ্ঞানকে গুছিয়ে নিয়ে তাকে উপস্থাপনযোগ্য করে তোলার জন্য।
যেহেতু বিগত বিসিএস গুলোর প্রশ্ন থেকে প্রতি বছরই কিছু প্রশ্ন কমন পড়ে সেহতু বিগত বছরের প্রশ্ন গুলোর উপর এক নজর চোখ বুলিয়ে নিন। বাকি সময়টা পরীক্ষার নিয়মানুযায়ী মডেল টেস্ট দিন। একটা OMR শীটকে ৮/১০ টা কপি করে নিন। এরপর ঘড়ি ধরে নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে ২ ঘণ্টায় মডেল টেস্ট দিন। পরীক্ষা শেষ হলে উত্তর দেখে স্কোর গণনা করুন। এতে আপনার সময়জ্ঞান পরিষ্কার হবে, আস্থা বাড়বে। চেষ্টা করুন দুই দিনে অন্তঃত ৮/১০ টা মডেল টেস্ট দিতে।
আপনার সিট প্ল্যান খুব ভালভাবে দেখে নিন। চেষ্টা করুন পরীক্ষার আগের রাতে পরীক্ষা কেন্দ্রের কাছাকাছি কোথাও থাকতে। তাহলে কিছুটা মানসিক চাপমুক্ত থাকতে পারবেন। সিট প্ল্যানের সাথে দেওয়া বা ম্যাসেজে আসা নির্দেশনা গুলো ভালভাবে পড়ুন এবং মেনে চলুন। পরীক্ষার হলে মানিব্যাগ, কলম ও প্রবেশপত্র ছাড়া আর যেকোন জিনিস (যেমনঃ ফোন, ঘড়ি, ব্যাগ, ক্যালকুলেটর ইত্যাদি) নেওয়া থেকে বিরত থাকুন। কমপক্ষে ৩ টা কালো কালির বল পয়েন্ট কলম সাথে নিন। একদম নতুন কলম নিবেন না। কিছুটা পুরোনো কলম নিন। দরকার হলে নতুন কলম দিয়ে মডেল টেস্ট দিয়ে সেগুলো পুরোনো বানান। পরীক্ষার আগের রাতে কমপক্ষে ৭/৮ ঘণ্টা ঘুমান। পরীক্ষার দিন সকালে উঠে নাস্তা করে ঠাণ্ডা মাথায় পরীক্ষা কেন্দ্রে চলে যান। কমপক্ষে পরীক্ষার দেড় ঘণ্টা আগে যাতে কেন্দ্রে পৌছাতে পারেন সেইরকম পর্যাপ্ত সময় হাতে নিয়ে বের হবেন। ঢাকায় যারা আছেন তারা সময়ের বেপারে আরও সাবধান থাকবেন।
ঠিক কত নম্বর পেলে আপনি প্রিলি তে টিকবেন এর কোন সঠিক উত্তর নেই। কারণ, কাটমার্ক নির্ভর করে প্রশ্নের উপর। অর্থাৎ, প্রশ্ন সহজ হলে কাটমার্ক বেশি (১২০ বা এর বেশিও হতে পারে) আবার প্রশ্ন কঠিন হলে কাটমার্ক কম (১১০ বা তার নিচেও হতে পারে)। তাই বলা যায়, আপনার স্কোর যদি ১২০+ থাকে সেক্ষেত্রে আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন এবং লিখিত পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি শুরু করতে পারেন। আমার মতে ১৪০-১৬০ টি প্রশ্নের উত্তর করা উচিৎ। এর বেশি বা কম নয়। প্রতি ভুল উত্তরের জন্য আপনার ০.৫ নাম্বার কাটা যাবে। তাই যে প্রশ্নগুলোর উত্তর আপনার একেবারেই অজানা সেগুলো উত্তর করা থেকে বিরত থাকুন। যেগুলো ৫০/৫০ কনফিউশন সেগুলো কিছু দাগাতে পারেন তবে এর সংখ্যা ১০/১৫ টার বেশি অবশ্যই না। আন্দাজে ভুল উত্তর দাগালে শুধু শুধু মার্কস কাটা যাবে যা আপনার সাফল্যের অন্তরায় হবে।
পরীক্ষার হলে প্রশ্ন পাওয়ার সময় অবশ্যই উত্তরপত্রের সেট কোডের সাথে মিলিয়ে নিন। প্রথমে ঠান্ডা মাথায় আপনার রেজিস্ট্রেশন নাম্বার পূরণ করুন। এই অংশ টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এখানে ভুল করা মানে হচ্ছে আপনার পরীক্ষা বাতিল কারণ আপনাকে অতিরিক্ত কোন উত্তরপত্র দেওয়া হবে না। ফলে এই অংশে সামান্য ভুল আপনার একটি বিসিএস নষ্ট করে দিতে পারে। নিজে যা পারেন সেইভাবেই পরীক্ষা দিন। অন্যের টা দেখা বা অন্যকে দেখানোর চেষ্টা করবেন না। ভুলেও ইনভিজিলেটর বা অন্য কারও সাথে কোন বাজে আচরণ করবেন না।
মোট ২০০ টি প্রশ্ন। প্রতি প্রশ্নের মান সমান। তাই ১ থেকে শুরু করে ২০০ পর্যন্ত যে প্রশ্ন গুলোর উত্তর আপনার নিশ্চিত জানা সেগুলো সিরিয়ালি দাগিয়ে ফেলুন। যেগুলো আপনার জানা নেই বা কনফিউজড সেগুলো প্রশ্নের নাম্বারে ছোট করে দাগ দিয়ে রাখুন। এইভাবে প্রথম রাউন্ড শেষ করার পর ২য় রাউন্ড শুরু করুন। এইবারে একটু সময় নিয়ে চিন্তা করতে থাকুন, তবে গণিত ব্যতীত অন্য প্রশ্নের পেছনে বেশি সময় নষ্ট করবেন না। এই ধাপে কিছু কনফিউজড প্রশ্নের উত্তর আপনার কাছে পরিষ্কার হবে। এভাবে ২য় রাউন্ড শেষ হবার পর ৩য় রাউন্ড শুরু করুন। তবে এই রাউন্ডে গণিত, মানসিক দক্ষতা এই বিষয়ের পেছনে সময় দিন। গণিতের জন্য প্রশ্নের মধ্যে রাফ করতে পারবেন। তবে উত্তরপত্রে কোন প্রকার অযাচিত দাগ দিবেন না বা উত্তরপত্র কোন অবস্থাতেই ভাজ করবেন না। যদি আপনি নিশ্চিত হন যে প্রশ্নে সঠিক উত্তর নেই বা প্রশ্নে ভুল আছে তাহলে সেগুলো ফাকা রাখুন। এভাবে ৩ রাউন্ডে আশা করি আপনি ২ ঘণ্টার মধ্যে আপনি সফলভাবে পরীক্ষা শেষ করতে পারবেন।
বিসিএস ক্যাডার হবার জন্য আপনার থাকা চাই জ্ঞান ও ধৈর্য্য। নিজেদের সেভাবেই গড়ে তুলুন। আশা করি এই দুইটি গুণের সমন্বয়ে আপনারা নিজেদের লক্ষ্যে পৌছাতে পারবেন। আপনাদের সকলের সর্বাঙ্গীণ মঙ্গল ও সাফল্য কামনা করি।
অমৃত সূত্রধর
সহকারী পুলিশ সুপার
৩৬ তম বিসিএস।