আজকের বিশ্বায়ন যুগের সূচনালগ্নে পারস্পারিক যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে প্রয়োজন পড়েছিল একটি একক ভাষার। ‘ইংরেজ সূর্য কখনো ডুবে না’ প্রবাদ মোতাবেক প্রাচীনকাল থেকে ছড়িয়ে পড়া ইংরেজরা তাদের ভাষাকেও ছড়িয়ে দিয়েছিল সারা বিশ্বময়। অবধারিতভাবে বিশ্বের সকল ভৌগলিক অবস্থানের পরিচিত ভাষা হিসেবে ইংরেজি ভাষা দখল করে নিল সেই স্থানটি। আমাদের এখনকার আলোচ্য সেটি নয়। যদি আজ প্রশ্ন তোলা হয়-ইংরেজি ভাষায় শিক্ষা গ্রহণ করে আমরা কোন ধরণের বা কোন কোন পেশায় সুযোগ পেতে পারি। তবে উত্তর হলো এমন কোনো পেশা নেই (সম্পূর্ণ কারিগরী বা বিষয়ভিত্তিক ও গবেষণামূলক বাদে) যেখানে আপনি সুযোগ পাবেন না।
ধরে নিলাম আপনি একজন ভাল ব্যাংকার হতে চান বা ব্যাংকিং বিষয়ে আপনার ক্যারিয়ার গড়তে চান। এদিকে আপনি ইংরেজিতে স্নাতক করেছেন। তবে চিন্তার কিছু নেই। দেশের সকল ব্যাংক ইংরেজিতে শিক্ষিত গ্রাজুয়েটদের ব্যাংকের চাকুরিতে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। তাছাড়া পরবর্তিতে ব্যাংকিং এর উপর স্বল্প মেয়াদী বা দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণ করলে, সহজেই ব্যাংকিং সেক্টরে আপনার ক্যারিয়ার গড়তে পারেন। আবার ধরে নিচ্ছি, আপনি ‘আউটসোর্সিং’ বা ইন্টারনেটের মাধ্যমে ঘরে বসে উপার্জন করাকে আপনার ক্যারিয়ার হিসেবে দেখতে চান। আপনার ইংরেজি বিষয়ে উচ্চশিক্ষা না থাকলেও সমস্যা নেই। শুধুমাত্র ইংরেজি পড়া ও লেখার জ্ঞানটুকু ভালভাবে আয়ত্ব করতে পারলেই এটা সম্ভব। এছাড়া গ্রাফিক্স ডিজাইনসহ কম্পিউটার ভিত্তিক সকল ক্যারিয়ারই ইংরেজির উপর নির্ভরশীল। এসকল বিষয়ে ইউটিউব থেকে টিউটোরিয়াল ক্লাসগুলো করে নিলেই হবে। তবে তার জন্যও প্রয়োজন ইংরেজির জ্ঞান। কারণ এগুলোর ভাষা আবশ্যিকভাবে ইংরেজি।
ইংরেজি ভাষায় পড়াশোনাঃ আমাদের দেশে প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় ইংরেজি ভাষায় শিক্ষাকে যথেষ্ঠ গুরুত্ব দেয়া হয়। আপনি নিয়মিত পদ্ধতিতে পড়াশোনা করে ইংরেজি ভাষায় যথেষ্ঠ দখল আনতে পারেন। তারপর এ ভাষায় উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের ইচ্ছা করলে উচ্চ মাধ্যমিকের পর ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক পড়তে পারেন। পরবর্তীতে এ বিষয়ে নানাবিধ উচ্চশিক্ষার দ্বার সারা বিশ্বের সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও ইনস্টিটিউটে উন্মুক্ত। আমাদের দেশে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে দু’টি প্রধান বিষয়ের উপর ইংরেজিতে পড়াশোনা করা যায়। একটি হলো ‘ভাষা’ এবং অন্যটি হল ‘সাহিত্য’।
‘ভাষা’ বিষয়ে পড়লে আপনি জানবেন ইংরেজি ভাষার ব্যাকরণ, উৎপত্তি, বিকাশ, সঠিক ব্যবহার এগুলো শিক্ষাদান করার পদ্ধতি।
‘সাহিত্য’ বিষয়ে পড়লে আপনি জানবেন ইংরেজি ভাষার সাহিত্য, তার উৎপত্তি ও সাহিত্য সম্পর্কিত নানাবিধ বিষয় সমালোচনা ইত্যাদি।
ঊহমষরংয গবফরঁস : এ পদ্ধতিতে পড়াশুনার জন্য সাধারণত বৈশ্বিক কারিকুলাম ও পূর্ব প্রচলিত ইংলিশ তথা ইংল্যান্ডের পাঠ্যতালিকা অবলম্বন করা হয়। পঠনের ভাষা থেকে শুরু করে বিষয়াদি সম্পূর্ণ ইংলিশ ভাবধারা অনুযায়ী। আবার এরই ছায়া অবলম্বনে বৈশ্বিক পাঠ্যতালিকা কিছুটা ইংলিশ ভাবধারামুক্ত। এবং সকল দেশের সকল ভাষাভাষীদের জন্য উপযোগী করে তৈরি করা।
ইংরেজি মাধ্যম পদ্ধতিতে আমাদের দেশীও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড অনুমোদিত বইগুলিই শুধুমাত্র ইংরেজি ভাষায় (বাংলা মৌলিক বইগুলি বাদে) পড়ানো হয়। ইংরেজি ভাষা শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেই সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি গড়ে উঠেছে নানাবিধ শিক্ষা বা প্রশিক্ষন প্রতিষ্ঠান।
সরকারী উদ্যোগঃ ‘মর্ডান ল্যাঙ্গুয়েজ সেন্টার’, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য প্রায় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে ইংরেজি ভাষার উপর স্বল্প মেয়াদি শর্ট কোর্স সমূহ। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরসহ সরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যা সারা বছরই চালু রাখে। এগুলি আপনার ক্যারিয়ার গঠনে আবশ্যিক ভূমিকা রাখতে পারে।
বেসরকারী উদ্যোগঃ বৃটিশ কাউন্সিলসহ নানাবিধ আর্ন্তজাতিক মানের প্রতিষ্ঠান সারাদেশে ছড়িয়ে রয়েছে ইংরেজি ভাষা দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রশিক্ষণদানের জন্য। যাদের প্রদত্ত সার্টিফিকেট আর্ন্তজাতিক মানের। যা ক্যারিয়ারে যথেষ্ট ফল দেয়। তবে এক্ষেত্রে যথেষ্ট যাচাই বাছাই পূর্বক বিশ্বাসযোগ্য প্রতিষ্ঠানের দারস্থ হওয়াই উত্তম। আপনি যদি পেশা হিসেবে শিক্ষকতাকে গ্রহণ করতে চান তাহলে সাধারণত এ বিষয়ে স্নাতক পর্যায় পর্যন্ত পড়লেই আপনি সেটার উপযুক্ততা অর্জন করতে পারেন। শিক্ষকতায় উচ্চতর ক্যারিয়ারের উদ্দেশ্যে আপনি ইংরেজিতে বিভিন্ন সার্টিফিকেশন কোর্স করতে পারেন।
আপনি আজ ভাল কোন চাকরির জন্য আবেদন করতে চাইলে আপানাকে আবেদন করতে হবে ইন্টারনেটের মাধ্যমে। যার ভাষা হল ইংরেজি। আজকে অগ্রসরমান বিশ্বে আপনি এই ছোট কাজের জন্য অন্যের উপর কেন নির্ভর করে থাকবেন?
যেকোন বিষয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করতে হলে আপনার পঠনের ভাষা হবে সাধারণত ইংরেজি। বিশ্বের উচ্চশিক্ষার যে সুবিশাল জ্ঞানভান্ডার সেটা বর্ণিত আছে এ ভাষাতেই। ইংরেজি ভাষায় দক্ষ হলে আপনি হতে পারেন একজন ভালো ব্যক্তিগত সহকারী, কল এজেন্ট, মার্কেট এজেন্ট, যোগাযোগ কর্মকর্তা, বিদেশী সাহায্য সংগ্রহ কর্মকর্তা, দোভাষী, ট্যুরিজম এজেন্ট ম্যানেজার, ডকুমেন্টেশন কর্মকর্তা বা ভাল একজন শিক্ষক। তাই ইংরেজি জেনে নিজেকে আকর্ষণীয় পেশায় যুক্ত করতে এগিয়ে আসুন। এগিয়ে যান আরো কয়েক ধাপ।
এছাড়া দেশী-বিদেশী এনজিওতে আজকাল ইংরেজি জানা প্রার্থীকে বেশ গুরুত্ব দেয়া হয়। এনজিও বলতে আমরা সে অংশটিকে বুঝি, সেখানে চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে আপনার ইংরেজি বিষয়ের জ্ঞান অপরিহার্য। যেহেতু তারা বিদেশী সাহায্যপুষ্ট ফলে বৈদেশিক দাতাদের সাথে যোগাযোগ রক্ষায় আপনাকে বিশ্বায়নের এই একক ভাষাকেই ব্যবহার করতে হবে। তাই পেশাগতভাবে নিজেকে কয়েকধাপ এগিয়ে নেবার জন্য ‘ইংরেজি’ শিক্ষাকে প্রাধান্য দিতে পারেন নিশ্চিন্তে, কথা দিতে পারি-ঠকবেন না।