JobTestBD

শেষ হলো পড়াশোনা, এবার চাকরি খোঁজার পালা। সাধারণত গ্র্যাজুয়েশন শেষ হলেই শুরু হয় চাকরি খোঁজাখুঁজি। পত্রিকার পাতা খুলেই আমরা খোঁজ নেই কোথায় কোন পোস্টটা আমাদের জন্য পারফেক্ট। আর চাকরি খোঁজার আগে প্রথমেই যে কাজটি করতে হবে তা হলো সিভি বা বায়োডাটা তৈরি করা। তার পর বিজ্ঞপ্তির সুবাদে সেই সিভি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পাঠানো। সিভি দেখেই কিন্তু একজন ব্যক্তির যোগ্যতা সম্পর্কে নিয়োগদাতারা জ্ঞাত হন এবং পরে ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকেন। কিন্তু জীবনবৃত্তান্ত বা সিভি দেয়ার পরও অনেক সময় প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায় না। এমনটা অনেকের বেলায়ই ঘটে। তাই সিভি তৈরিতে হতে হবে বিশেষভাবে সচেতন ও সতর্ক। এবারে আসি একটি আদর্শ সিভি বা বায়োডাটা কীভাবে তৈরি করা যায়, সে বিষয়ে। এখানে নিচের কিছু বিষয়ের প্রতি মনোযোগ দিন।

নিখুঁত ও সফল সিভি তৈরির নিয়ম  তুলে ধরা হলো এই লেখায়ঃ

সাধারণ দিকনির্দেশনা
আপনার সিভি বা রিজিউমের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে ইন্টারভিউ পর্যন্ত আপনাকে পৌঁছে দেয়া। নিজের সম্পর্কে বলতে গিয়ে সর্বদাই আপনার যোগ্যতাকে এমনভাবে তুলে ধরুন যেন তা খুব সহজেই আপনার সকল তথ্যের বিকল্প হয়ে উঠতে পারে। এজন্য প্রথমেই চিন্তা-ভাবনা করে আপনার সিভি’র কোন কোন জায়গায় আপনি জোর দেবেন তা ভাবুন।

সিভি’র দৈর্ঘ্য
যারা সদ্য গ্র্যাজুয়েট, তাদের জন্য একপাতার সিভি’ই যথেষ্ট। আপনার কাজের অভিজ্ঞতা যদি খুব বেশি হয়, তাহলে এর দৈর্ঘ্য বড়োজোর দুই পৃষ্ঠা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে যে পদটির জন্য আপনি আবেদন করছেন তার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয় এমন কাজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করার প্রয়োজন নেই। এ ছাড়া দুই পৃষ্ঠার সিভি লেখার ক্ষেত্রে প্রথম পাতাতেই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো রাখার চেষ্টা করুন।

উপস্থাপনা
একটি ভালো সিভি’র জন্য এর উপস্থাপনের প্রক্রিয়াতেও জোর দেওয়া জরুরি। আপনার সিভিটি যেন সুশৃংঙ্খল এবং চোখে পড়ার মতো হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন। সিভিটি অবশ্যই কম্পিউটারে কম্পোজ করে উপস্থাপনের চেষ্টা করুন। যে কাগজটিতে প্রিন্ট করবেন সেটা যেন ভাল মানের সাদা বা অফ-হোয়াইট কাগজ হয়। সিভিতে যেন কোনো বানান বা ব্যবকরণগত ভুল না থাকে, সেদিকেও লক্ষ রাখতে হবে।

আধেয় বা কনটেন্ট
সিভি তৈরির আগে একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য বা অবজেকটিভ ঠিক করুন। পুরো সিভিতেই এই অবজেকটিভের কথা মাথায় রেখে পয়েন্টগুলো উপস্থাপন করুন। তথ্যগুলো সিভিতে দেওয়ার আগে আলাদা একটি কাগজে লিখুন এবং তারপর গুরুত্বের ক্রমানুসারে এগুলোকে সিভিতে উপস্থাপন করুন। অতিরিক্ত তথ্য দিয়ে কাউকে বিরক্ত করার চাইতে বাছাই করা তথ্যগুলোই কেবল সিভিতে রাখুন। নিজের দেওয়া তথ্যগুলো যাতে অতিরঞ্জিত না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখুন।

প্রয়োজনীয় তথ্যসমূহ
সিভি তৈরির প্রাথমিক পরামর্শের পর আপনার প্রয়োজন হবে সিভিতে কোন কোন তথ্যগুলো রাখবেন, তা সঠিকভাবে নির্বাচন করা। এখানে এই বিষয়গুলো তুলে ধরা হলো।

ব্যক্তিগত তথ্য
একটি সিভি হাতে নিয়ে চাকরিদাতার প্রথমেই নজর পড়বে সিভির একদম উপরের অংশে। কাজেই উপরের অংশটি একরকমভাবে চাকরিপ্রার্থীর ভিজিটিং কার্ড। এখানে প্রার্থীর প্রাথমিক ব্যক্তিগত তথ্য রাখতে হবে। এর মধ্যে থাকবে নাম, ফোন নম্বর বা মোবাইল নম্বর, ইমেইল ঠিকানা ও চিঠি পাঠানোর ঠিকানা। এসব তথ্য স্পষ্ট আর নির্ভুলভাবে উল্লেখ না করা হলে আপনাকে নিয়োগদাতার পছন্দ হলেও সে তথ্য আপনার অজানাই থেকে যাবে। আর ব্যক্তিগত তথ্যের এই অংশে বয়স, বৈবাহিক অবস্থা বা স্বাস্থ্যগত বর্ণনা প্রভৃতি দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।

উদ্দেশ্য বা অবজেকটিভ
আপনার সিভি বা রিজিউমে অবশ্যই অবজেকটিভ বা ক্যারিয়ার অবজেকটিভ শিরোনামে আলাদা একটি অংশ রাখতে হবে। এতে করে আপনার সিভিটি অনেক বেশি ফোকাসড এবং সুনির্দিষ্ট বলে মনে হবে। কাঙ্ক্ষিত চাকরিটি থেকে আপনি কী অর্জন করতে চান, আপনার ওপর কতটুকু নির্ভর করা যায় প্রভৃতি বিষয় স্পষ্ট করে লিখুন এই অংশে।

শিক্ষাগত যোগ্যতা
আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতাগুলোকে উল্টোদিক থেকে উপস্থাপন করুন। অর্থাত্ সর্বোচ্চ ডিগ্রিটিকে সবার আগে লিখুন এবং তারপর ক্রমে একই ধারাবাহিকতায় অন্যগুলোর কথা বলুন। গ্র্যাজুয়েশন করার সময় কোনো রিসার্চ বা থিসিস নিয়ে কাজ করলে সেটার কথাও উল্লেখ করতে পারেন এই অংশে।

কাজের অভিজ্ঞতা
আপনার যেকোনো কাজের ইতিহাস, স্বেচ্ছাশ্রমের বৃত্তান্ত কিংবা ইন্টার্নশিপের তথ্য দিতে পারেন এ অংশে। এ ক্ষেত্রে আপনি কী পদে কাজ করতেন, আপনাকে কী ধরনের কাজ করতে হতো, নিয়োগদাতা ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নাম এবং কাজের সময় অর্থাত্ কবে থেকে কবে পর্যন্ত কাজ করেছেন ইত্যাদি বিষয়গুলো উল্লেখ করুন। যে পদের জন্য আবেদন করছেন তার সাথে সংশ্লিষ্ট এমন কোনো অ্যাসাইনমেন্টও যদি কোনো সময় করে থাকেন, তবে তার কথাও উল্লেখ করতে পারেন। এমন কোনো অভিজ্ঞতা উল্লেখ না করাই ভালো, যা চাকরির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

রেফারেন্স
আপনার দেওয়া তথ্যগুলো সম্পর্কে যেন দ্বিতীয় কোনো ব্যক্তি থেকে জানা যায়, সেজন্যই এই রেফারেন্সের ব্যবস্থা। যাদের রেফারেন্স দিচ্ছেন অবশ্যই আগে থেকেই তাদের অনুমতি নেবেন এবং বিষয়টি তাদের জানিয়ে রাখবেন। মোট রেফারেন্সের সংখ্যা দু’টি থেকে পাঁচটির মধ্যে সীমিত রাখাই উত্তম। যাদের রেফারেন্স আপনার সিভিতে দিচ্ছেন তাদের নাম, কোন পদে কাজ করেন, ব্যবসায়িক বা অফিসের ঠিকানা, ফোন নম্বর ইত্যাদি সঠিকভাবে উল্লেখ করতে হবে।

মনে রাখুন
সিভি হচ্ছে চাকরিদাতার সামনে আপনার প্রথম উপস্থাপনা। কাজেই চাকরিদাতার কাছে আপনার ‘ফার্স্ট লুক’ হচ্ছে আপনার সিভি। কাজেই এর সৌন্দর্যই হচ্ছে আপনার সৌন্দর্য। সিভিতে প্রয়োজনীয় তথ্যগুলোর সংযোজন যেমন জরুরি, তেমনি জরুরি এর দেখতে সুন্দর হওয়া। বাড়তি তথ্য আর ডিজাইনের ভিড়ে সিভিকে ভারি করবেন না। ডিজাইনের দিক থেকেও পরিচ্ছন্ন রাখুন। তাহলে সহজে এটি দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *