রাত জেগে শিপমেন্ট ডেলিভারি দাও তুমি অথচ ক্রেডিট নেয় আরেকজন। বোনাস খায় অন্য আরেকজন। সারা অমানবিক পরিশ্রম করলেও , বছর শেষে প্রমোশন পায় জুনিয়র পোলাপান।তাই প্রোমোশনের কথা চিন্তা করতে গেলে প্রথমেই বুঝতে হবে- প্রতিদিনের কাজ ঠিকমতো করে, কিছু এক্সট্রা এফোর্ট দিয়ে- চাকরি টিকিয়ে রাখা যায়, প্রমোশন জুটানো যায় না। প্রমোশন পেতে হলে প্রমোশন পাওয়ার লাইনে সিস্টেমেটিক এফোর্ট দিতে হবে। নিচের মতো করে-

প্রোমোশনের স্কিল:

১. প্রমোশন পাওয়ার জন্য টেকনিক্যাল স্কিলের চাইতেও ইমেইল রাইটিং স্কিল অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। শুধু মাত্র ভালো ইমেইল এবং ভালো রিপোর্ট লিখে খুব সহজেই দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায়।

২. প্রেজেন্টেশন এবং স্টোরি টেলিং স্কিল ডেভেলপ করতে হবে। অফিশিয়াল মিটিং ইফেক্টিভভাবে সঞ্চালন করার টেকনিক জানতে হবে। কোন ঘটনা, কনসেপ্ট বা আইডিয়াকে যত অল্প কথায় ইন্টারেস্টিং-ভাবে প্রেজেন্ট করতে পারবে, তত দ্রুত প্রমোশন পাবে।

৩. কোম্পানির ভিশন, ফিউচার স্ট্রাটেজি আর কঠিন কঠিন বিজেনসের টার্মিনোলজি ঠোটস্থ রাখতে হবে। মিটিংয়ে সুযোগ পেলেই সেগুলা ছাড়তে হবে।

৪. তোমার একজন মেন্টর বা ক্যারিয়ার কোচ বা উপদেষ্টা লাগবে। যে তোমার চাইতে উপরের লেভেলে আছে এবং তোমাকে গাইড করবে। কি কি স্কিল ডেভেলপ করা লাগবে, নতুন কোন সফটওয়্যার ট্রেনিং নেয়া লাগবে বলবে। তোমার বস, তোমার ক্যারিয়ার কোচ হলে সবচেয়ে ভালো। তাহলে বসের কথা অনুসারে সবকিছু করে ফেললে- বসকে প্রমোশনের জন্য চাপ দেয়াটা সহজ হবে।

প্রোমোশনের রিলেশন স্থাপন:

৫. মাঝে মধ্যে উপরের লেভেলের লোকজনের সাথে লাঞ্চ বা কফি খেতে যাবা। সুযোগ পেলে উনার বাসা যেদিকে সেদিকে যাওয়ার দরকার না থাকলেও, উনার গাড়িতে লিফট চাইবা। আগে থেকে উনার প্রিয় টিম, প্রিয় মুভি জেনে উনার সাথে ইজি হওয়ার চেষ্টা করবা। এইভাবে কয়েকবার আলোচনা করতে পারলে; অফিসের নতুন প্রজেক্ট, কে চাকরি ছেড়ে দিচ্ছে, কোন পজিশন ওপেন হচ্ছে, সেগুলা কথায় কথায় হিন্টস পেয়ে যাবা। তখন সেই অনুসারে নিজেকে প্রস্তুত করা সহজ হবে।

৬. অফিসের কোন পার্টি মিস করা যাবে না। বরং পিকনিক, কালচারাল নাইট এর মতো বিশেষ পার্টিগুলো অর্গানাইজ করার দায়িত্ব নিবা। এই এক্সট্রা খাটুনি, ফাও প্রেসার নিলে, সহজেই উপরের লেভেলের লোকজনের সাথে পরিচয় ও ইন্টার‍্যাকশন বাড়বে। যা ফিউচারে অনেক কাজে লাগে।

৭. কলিগদের সাথে ঝামেলা পাকিয়ে, বসের সাথে ঝগড়া করে কোনদিনও প্রমোশন পাবে না। বরং ফ্রাস্ট্রেটেড হয়ে চাকরি ছেড়ে দেয়ার চান্স বাড়ে। তাই ঝামেলা না বাড়িয়ে চেষ্টা বাড়াও।

৮. অন্য ডিপার্টমেন্টের কাজে হেল্প করার সুযোগ থাকলে আগ বাড়িয়ে হেল্প করবা। তাহলে অন্য ডিপার্টমেন্টের বস, তোমার বসের সাথে কথা বলার সময়- তোমার সম্পর্কে ভালো কথা বলবে।

অনুকরণের প্রোমোশন:

৯. কাকে কবে প্রমোশন দেয়া হবে, সেটা ঘোষণার আগের দিন বা পারফরম্যান্স রিভিউ করার দিন ঠিক হয় না। বরং তাদের হাব-ভাব, কাজের স্টাইল, এটিচিউড দেখে আগেই আন্দাজ করা যায়। সো, অফিসে যারা রিসেন্টলি প্রমোশন পাইছে তাদের লাস্ট এক বছরের এক্টিভিটির এনালাইসিস করো। তারা যে যে স্পেশাল ট্রেনিং, এমবিএ বা এক্সট্রা রেস্পন্সিবিলিটি নিছিলো, তুমিও সেগুলা করবা। দরকার হলে, রাত জেগে জেগে অনলাইনে স্টাডি করো। পার্টটাইম এমবিএতে ভর্তি হও।

১০. কথায় কথায় কমপ্লেইন করা লুজারদের কাছ থেকে দূরে থাকবা। অফিসে ক্যারিয়ার নিয়ে সিরিয়াস লোকজনের সাথে উঠা-বসা করবা। তাদের ফলো করবা। তাদের কাছে সাজেশন চাইবা।

এচিভমেন্টের বিজ্ঞাপন:

১১. দৃষ্টি আকর্ষণ এবং ভালো কাজের সুনাম অর্জন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে সব হার্ডওয়ার্ক, সব এচিভমেন্ট সবসময় সবার নজরে আসবে না। তাই তোমার ভালো কাজের মার্কেটিং তোমাকেই করতে হবে। ছোটখাটো, বড়সড় সব এচিভমেন্টগুলা লিখে রাখবা। সপ্তাহে এক ঘন্টা সময় রাখবা- অফিসে বা অফিসের বাইরে, সেগুলা তোমার বস বা অফিসের বস লেভেলের লোকজনকে শুনানোর জন্য। তাদের ফিডব্যাক নেওয়ার জন্য।

Promote yourself:

১২. নিজের দৈনন্দিন কাজ ঠিকমতো করার পাশাপাশি উপরের লেভেলের কিছু এক্সট্রা দায়িত্ব নিতে হবে। যেটাকে বলে- Promote yourself. অর্থাৎ অফিশিয়াল প্রোমোশনের আগেই- প্রমোশন পাওয়া লেভেলের কাজ করা। যাতে ওই পজিশনে দিলে তুমি কাজ করতে পারবেন সেটা প্রমোশনের আগেই প্রমাণ করা। তাই বস ছুটিতে গেলে- বসের হয়ে উপরের লেভেলের লোকজনের সাথে প্রফেশনালিজম শো করার সুযোগটা ইফেক্টিভলি কাজে লাগাতে হবে।

১৩. নিত্য নতুন উদ্যোগ নিতে হবে। কোন প্রব্লেম দেখতে পেলে, ইফেক্টিভ সল্যুশন নিয়ে বস বা উপরের লেভেলের লোকজনের সাথে কথা বলতে হবে। বস বা অন্য কেউ কোন একটা কাজ শেষ করতে না পারলে, নিজে সময় বের করে ওদের হেল্প করতে হবে। তাতে উপরের লেভেলের লোকজনের আস্থা অর্জন করা সহজ হবে। তখন নতুন কিছু নিয়ে আলোচনা করতে গেলে, তোমার ডাক পড়বে। নতুন পজিশন খালি হলে তোমাকে কনসিডার করবে।

বসের সস:

১৪. তোমার অগ্রগতির সিঁড়ির দরজা তোমার বসের হাতে। তাকে পাশ কাটিয়ে কোনভাবেই প্রমোশন পাওয়া যাবে না। সে যত ভালো বা যত খারাপই হোক না কেনো, তার সাথে সম্পর্ক ভালো রাখতে হবে। চান্স পেলে, বসের উপরের লেভেলের লোকজনের সামনে, বসের সুনাম করতে হবে। দরকার হলে, নিজের কাজ দিয়ে বসের প্রশংসা করে দিবা। মনে রাখবা- বসকে যত এক্সট্রা ক্রেডিট দিবা, তার তিনগুণ ফেরত পাবা।

এতে অন্যরা তোমাকে তেলের টাংকি বললেও – তুমি এটাকে প্রোমোশনের ইনভেস্টমেন্ট হিসেবে চিন্তা করবে। তাই বস ভুল বললে, অন্যদের সামনে তার ভুল ধরবা না। কারণ বসরে বিপদে ফেলানোর চেষ্টা করলে, কিছুদিন পরে চাকরি নিয়ে টানাটানি পড়বে।

১৫. ম্যানেজার এক্সট্রা কাজ দিলে বা উপরের লেভেলের কোন বস কোন কিছু করে দিতে বললে – কখনোই না বলা যাবে না। বরং ইম্পরট্যান্ট মিটিং এর আগে ম্যানেজারকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো বুলেট পয়েন্টে আকারে গুছিয়ে দিলে, বস অনেক হ্যাপি হবে।

প্রফেশনাল হ্যাভিট:

১৬. কখনো দেরি করে আসবা না। আগে থেকে না বলে, হুট করে ছুটি নিবা না। বসের আগে অফিস থেকে বের হবা না। অফিসে চ্যাটিং, ফেইসবুকিং বা ফোনে বেশি কথা বলবা না। প্রফেশনাল ড্রেস-আপ করবা। প্রফেশনাল রিলেশন বজায় রাখবা।

প্রোমোশনের জন্য চেষ্টা করা একটা বড় ধরণের কমিটমেন্ট। সো, এই কমিটমেন্ট অনুসারে ফ্যামিলি, পার্সোনাল ঝামেলা গুলি গুছিয়ে নাও। ছয় মাস থেকে এক বছরের টার্গেট নিয়ে নামো। স্কিল ডেভেলপ করো। প্রমোশন অর্জন করো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *