বর্তমান বিশ্বকে বলা হয় Global village। সমগ্র বিশ্বটি যেন একটি ছোট্ট গ্রাম। তাই বিশ্বব্যাপী পারস্পরিক যোগাযোগ, উচ্চ শিক্ষা, ভালো চাকরি, ব্যবসা বাণিজ্যসহ সকল প্রকার কর্মকাণ্ডের জন্য আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে ইংরেজী শেখা অপরিহার্য। তাছাড়া প্রতি বছর SSC,HSC ও ডিগ্রি পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, যে সকল ছাত্র/ছাত্রী ফেল করে তার ৮০% ফেল করে শুধু ইংরেজীতে।

অনেক খুরধার মেধাবী ছাত্র/ছাত্রী অন্যান্য সকল বিষয়ে সাফল্য অর্জন করলেও শুধুমাত্র ইংরেজীতে ফেল করার কারণে জীবনের দুর্বার অগ্রযাত্রা হঠাৎ করেই থমকে যায়। বিষয়টি অত্যন্ত বেদনাদায়ক। অনেক শিক্ষার্থীকে বলতে শুনেছি- স্যার, শুধু ইংরেজী আমার জীবকে থামিয়ে দিল। ইংরেজীর কাছে উক্ত ছাত্রের দুর্ভাগ্যজনক আত্মসমর্পন শিক্ষক হিসেবে আমার চিত্তকে বিক্ষুদ্ধ না করে পারেনা।

তাই বার বার প্রশ্ন জাগে, উক্ত ছাত্রের দুর্ভাগ্যের জন্য দায়ী কে? ছাত্রটি নিজে ? প্রচলিত ইংরেজী শিক্ষা পদ্ধতি ? নাকি ইংরেজী শিক্ষক সমাজ ? সেই জটিল প্রশ্নের উত্তর খুজতেই- ইংরেজী শেখার উন্মক্ত রহস্য-লেখার ধারণাটি আমাকে বহুদিন থেকে নিরন্তর তাড়া করে বেড়াচ্ছে।

ইংরেজী শেখার উন্মুক্ত রহস্য-লেখাটি শুরু করার অনেক পূর্বে যে লেখাটি আমাকে ব্যপকভাবে আন্দোলিত করেছিল-যা আমার যুক্তিতে সূর্যোদয়ের মত সত্য মনে হয়, মৃত্যুর মত অনিবার্য মনে হয়, এবং যা আমি নিজে ও ইংরেজী শেখার উন্মক্ত রহস্য বলে মনে করি তাহলো- বাংলাদেশের অন্যতম একজন প্রথিত যশা শিক্ষাবিদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ইংরেজীর অধ্যাপক ড. সদর উদ্দীন আহমেদ এর লিখিত- Learning English-The Easy Way -এর দ্বিতীয় সংস্করনের ভূমিকায় তিনি যা লিখিছেন তা কেন যেন মনে হয়- ড. সদর উদ্দিন আহমেদ স্যার আমার মনের গভীরে অংকুরিত প্রছন্ন চেতনা অনেক আগেই পুস্প ও পল্লবে সুশোভিত করে গেছেন।

প্রাসংগিক কারণেই উক্ত কথাগুলো হুবহু তুলে ধরছি।“ আমাদের দেশের ছাত্র/ছাত্রীরা ১২ বছর বাধ্যতা মুলকভাবে ইংরেজী পড়ে । কিন্ত এত বছর পড়ার পরও এই ভাষায় তাদের দখল করুণভাবে অপর্যাপ্ত । বিপুল সংখ্যক ছাত্র/ছাত্রী ইংরেজীতে ফেল করে। এমনকি যারা ভালো নম্বর পেয়ে পাশ করে তারাও গ্রহণ যোগ্য ইংরেজীতে কোনো ভাব ব্যক্ত করতে পারেনা। স্পষ্টত: ইংরেজী শিক্ষা পদ্ধতিতে ত্রুটি রয়ে গেছে।

কোন বিদেশি ভাষা আয়ত্ত করতে হলে ঐ ভাষার শব্দ শিখতে হবে, কারণ শব্দ ভাব প্রকাশের বাহন। যিনি যত বেশি শব্দ জানবেন, তার পক্ষে ভাষা বুঝতে ও ভাব প্রকাশ করতে তত সহজ হবে। কিন্ত শব্দের শুধু অর্থ শিখলে হবে না শব্দকে ব্যবহার করতে জানতে হবে।

আমাদের ছাত্র/ছাত্রীদের ইংরেজী শব্দ সম্পদ(Vocabulary) অত্যন্ত সীমিত। এর অন্যতম প্রধান কারণ এই যে, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে যেভাবে প্রশ্ন করা হয় তাতে শব্দ শিখতে শিক্ষার্থীরা কোন তাগিদ বোধ করেনা। তাছাড়া যে মুষ্টিমেয় শব্দ তারা শেখে, ইংরেজী ব্যাক্যের Structure এর উপর কোন দখল না থাকায় সেগুলো তারা ব্যবহার করতে পারেনা।

মনে রাখতে হবে যে, ইংরেজী বাক্য কতকগুলি Structure এ নির্মিত হয়। যাদের মাতৃভাষা ইংরেজী তারা শিশুকাল থেকে অন্যের মুখে শুনে ও নিজে বলতে বলতে অনেকটা অবচেতন ভাবে (Unconsciously) সেগুলো আয়ত্ত করে। কিন্ত যাদের মাতৃভাষা ইংরেজী নয় এবং ইংরেজী শুনে শিখবার কোন সুযোগ নেই তাদেরকে Structure শেখাতে হবে।”

প্রসঙ্গক্রমে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও একজন অধ্যাপক জহুরুল ইসলামের চমৎকার কিছু কথা পাঠক হৃদয়কে সন্দেহাতীতভাবে নাড়া দেবে। অধ্যাপক জহুরুল ইসলাম তার- “A Key To Structure Analysis” এর Chapter One এ Structure এর সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন- Imagine a girl weaving a garland of flowers. In order to weave this garland, the girl needs a lots of flowers.the flowers may be all of the same kind or they may be of various kinds. similarly in our daily life too. we weave many garlands. we always make garlands of world for the purpose of communication with one another.”

সংক্ষেপে বলা যায়, আমরা প্রতি দিন একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য সর্বদা অসংখ্যক শব্দের সুদীর্ঘ মালাগাঁথি। উপরোক্ত দুই বিশেষজ্ঞের মতামত এক এবং অভিন্ন। মালা বুননের জন্য যেমন ফুল ও সুতা অপরিহার্য, একইভাবে মনের ভাব প্রকাশের জন্য যে Sentence গঠিত হয় তার প্রধান উপাদান Word বা শব্দ। তাই ইংরেজী শিখন পদ্ধতিকে অন্য কথায়- Magic Of Words বললেও অত্যক্তি হবে না।

উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় আমি ভাত খাই। বাক্যটি ইংরেজীতে লিখতে তিনটি শব্দের প্রয়োজন ( I, Eat ও Rice)। এই বাক্যটি সঠিকভাবে সাজানোর জন্য (structure: subject+ verb +object) জানা দরকার। কিন্তু structure জানার পরও কেউ উল্লেখিত ৩টি শব্দ না জানলে, কোনোভাবেই এত সহজ একটি বাক্য গঠন করতে পারবে না।

আমি আমার শ্রেনি কক্ষে ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে দুইটি বাক্য নিয়ে অনেকবার জরিপ করেছি। আমি অনেক নবীন ও প্রবীন ইংরেজী শিক্ষকদের মাঝেও জরিপ করেছি। কিন্তু বিস্ময়কর হলেও সত্য, ফলাফল একই। বাক্য ২টি হলো (১) আমি ভাত খাই, I eat rice (এখানে i subject, eat হচ্ছে verb এবং rice হলো object) । বক চুনা পানি খায়, The crane swallows small species of fishes. এখানে structure: বা গঠন রীতি একই শুধুমাত্র words জানার কারণে প্রথম বাক্যটি ১০০% ছাত্র-ছাত্রী সঠিকভাবে translate করতে সক্ষম হলেও word না জানার কারণে ১০০% ছাত্র-ছাত্র দ্বিতীয় বাক্যটি translate করতে সক্ষম হয়নি।

অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন communicative English এ grammar জানার প্রয়োজন নেই। এই সারশূন্য অমুলক ধারণাটি ইংরেজী শেখার জন্য একটি বিপদজনক অন্তরায়। আমি অত্যন্ত দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই, যাদের মাতৃভাষা ইংরেজী নয় কিম্বা পারিবারিক, সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক পরিমণ্লেড ইংরেজী শুনে শেখার সুযোগ নেই, তাদের জন্য grammar ছাড়া কোন অবস্থায় সঠিক বাক্য গঠন করা সম্ভব নয়। তা ছাড়াও শুনে শুনে বা মুখে মুখে কোন কিছু শিখে মনের ভাব কোনো মতে প্রকাশ করা সম্ভব হলেও লিখিতভাবে কোন যোগাযোগ বা নিত্য প্রয়োজনীয় অনেক জরুরি কাজ করা সম্ভব হয় না।

সুতরাং উপরোক্ত আলোচনা হতে ২টি সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি (১) শুধু ইংরেজী নয়, যেকোন ভাষা শেখার প্রধান হাতিয়ার উক্ত ভাষার বহুল এবং নিত্য ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ শব্দগুলো সর্বাধিক সংখ্যক আয়ত্ত করা। (২) শব্দগুলো সুবিন্যস্তভাবে সাজানোর জন্য প্রয়োজনীয় structure বা grammar জানা দরকার। (শব্দ শেখার কৌশল নিয়ে পরবর্তী লেখায় আলোচনা করবো)।

* ইংরেজী শেখার আরও একটি প্রধান অন্তরায় হলো সবকিছু মুখস্ত করে কোনোমতে পরীক্ষা হলে বমন করে আসা। আমি class six থেকে degree পর্যন্ত সকল syllabus গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছি। প্রায় সকল শ্রেণিতেই essay, paragraph, composition, letter, application, story-writing, summary writing অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সকল শ্রেণিতেই সকল ছাত্র-ছাত্রী কোন কিছুর অর্থ না জেনে অন্ধের মত মুখস্ত করে পরীক্ষায় পাশ করছে। এটা একেবারই ভুল পদ্ধতি এবং এইভাবে অনেক দশক ধরে আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরা ইংরেজী বিষয়ে করুণভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে এবং গোটা জাতিকে আজ অপুরণীয় ক্ষতির সম্মূখিন হতে হচ্ছে।

ধরুণ একজন ছাত্র the cow রচনাটি মুখস্ত করে সুন্দর ও নির্ভূলভাবে পরীক্ষার খাতায় লিখে ভালো নম্বর পেলো। ধরে নিতেই হবে ছেলেটি ইংরেজীতে ভালো। কিন্তু অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়, ছেলেটি the cow সম্পর্কে যে sentence গুলো পরীক্ষার খাতায় লিখে ভালো নম্বর পেলো, সেইগুলোর প্রকৃত অর্থ এবং গঠন তার অজানাই রয়ে গেল। এই ছেলেটি কিছু দিনের মধ্যেই মুখস্ত রচনাটি ভুলে যাবে এবং নতুন কিছু নিজে লেখার যোগ্যতা ও তার হলো না। প্রকৃত পক্ষে ছেলেটি ইংরেজীতে ভালো নম্বর পেয়ে পাশ করেও তার কিছুই শেখা হলো না। ফলে ছেলেটি গরুর রচনা মুখস্ত করে মূলত ছাগলে রূপান্তরিত হলো।

অথচ প্রকৃত ও সঠিক পদ্ধতি হলো the cow রচনাটি লিখতে যে যে word গুলো প্রয়োজন, প্রথমে সেই word গুলো শিখতে হবে এবং গরুর বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য ও অঙ্গ প্রত্যঙ্গের বর্ণনা দিতে যে, বাক্যগুলো লেখার প্রয়োজন তার গঠন জানতে হবে। বাকী কাজটুকু শির্ক্ষাথী নিজেই করবে এবং সেটাই হবে তার প্রকৃত শিখন। অর্থাৎ কোন sentence মুখস্ত নয় মুখস্ত করতে হবে অসংখ্যক অতি প্রয়োজণীয় words এবং ৯টি বেসিক structure। তাছাড়া রচনা মানে কোন কিছু মুখস্ত করা নয় বরং কোন কিছু নিজে তৈরী করা।

আবারও অধ্যাপক জহুরুল ইসলামের ভাষায় “দুঃখজনক হলেও একথা সত্য যে আমাদের শিক্ষার্থীদের bank of vocabulary খুবই হতাশা ব্যঞ্জক”। তাই ১৪ বছর যাবৎ ইংরেজী বাধ্যতামূলক বিষয় হওয়া সত্বেও ডিগ্রি কিম্বা এমএ পাশ একজন শিক্ষিত ব্যক্তি সঠিক ভাবে ইংরেজী পড়তে, বলতে এবং লিখতে পারেনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *